Loksabha Election 2024: কবিয়ালের গানে ফুটবে পদ্ম নাকি কায়েম থাকবে শাসক-রাজ, নজরে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র
পূর্বের কাটোয়া লোকসভা ভেঙে ২০০৯ সালে তৈরী হয় বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র। বাম জমানায় দাঁত ফোটানোই দায় ছিল এই কাটোয়ায়। বাম শাসনের শেষের দিকে ২০০৯ সালে যখন রাজ্যে নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুর আন্দোলনের জেরে মমতা হাওয়া বইছে তখনও বর্ধমান পূর্বের পাল নিজেদের দিকে টেনে রাখতে সক্ষম হয়েছিল বুদ্ধবাবুরা। তবে সেই শেষ। ২০১৪ সালে এই আসন দখল করে তৃণমূল। প্রার্থী অবশ্য প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা সুনীল মন্ডল। লাখের বেশি ভোটে জয় পায় শাসক দল। ২০১৯ এও তাই সুনীল মন্ডলকেই দিল্লি পাঠায় বর্ধমান পূর্বের আমজনতা। কিন্তু বাঁধ সাধলো ২০২১ সালে। শুভেন্দু অধিকারির সঙ্গেই বিজেপি মুখো হলেন সাংসদ। নিজের বিজেপিতে যোগদানের কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও অবধি তিনি তৃণমূলের সদস্য। পরে ২০২১ বিধানসভায় তৃণমূলের জয় হলে অবশ্য দলেই থেকে যান তিনি। তবে এই ভোটে যে আর টিকিট জুটবে না তা বিলক্ষণ জানতেন রাজনীতির কারবারিরা। হলও তাই। বিদায়ী সাংসদকে বিদায় জানিয়ে তৃণমূল এই বারে প্রার্থী করেছে নতুন মুখ শর্মিলা সরকারকে। পেশায় চিকিৎসক, নিজে সরাসরি ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও পারিবারিক সূত্রে তৃণমূলের সঙ্গে যোগ রয়েছে। অগ্রদ্বীপের মেয়ে শর্মিলার রয়েছে এক কঠিন জীবন সংগ্রামের ইতিহাসও। বাবা ছিলেন অগ্রদ্বীপের বাজারের সবজি বিক্রেতা। সেই সুত্রেই নারীর টান বর্ধমান পূর্বের সঙ্গে। পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা বর্ধমানেই। তাই তৃণমূলের ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগানটি যেন তাঁর জন্য তৈরী। যদিও এই স্লোগানে এইবার ভোট প্রচারে নামেনি শাসকদল।
বিপরীতে বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার। কবিয়াল হিসাবে গানের জগতে বেশ নাম রয়েছে। আবার তাঁর গুরুর সূত্রে কালনার আশ্রমে বেড়ে ওঠা অসীমের। একসময় নিয়মিত গানে গেয়ে বেড়িয়েছেন কালনা থেকে কাটয়ার নানা জায়গায়। তাই সেই সূত্রেও সেখানকার মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচিতি। অসীমের রাজনীতিতে হাতে ক্ষড়ি ২০২১ সালে। মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁয় মতুয়া ভোট পেতেই মতুয়া কবিয়াল অসীম সরকারকে হরিণঘাটা বিধানসভায় প্রার্থী করে বিজেপি। স্বাভাবিক ভাবেই জয় পেয়েছিলেন অসীম। হিসেব বলছে বর্ধমান পূর্ব লোকসভাতেও বেশ কিছু জায়গায় মতুয়া ভোট রয়েছে। তা যাতে কোনও ভাবেই হাতছাড়া না হয় তাই অসীমকেই লোকসভায় প্রার্থী করেছে পদ্ম শিবির। সঙ্গে কবিয়াল জীবনের পরিচিতি যে তাঁকে বাড়তি নম্বর দিয়েছে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই কেন্দ্রে জোট সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী নীরব খাঁ। এর আগ পৌরসভা তারপর বিধানসভা ভোটে লড়ে এখন লোকসভা ভোটে প্রার্থী নীরব। তবে কতটা সুবিধা করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। গত লোকসভায় বাম-কংগ্রেসের ভোট যোগ করলে অঙ্ক হয় প্রায় ১৫.০১ শতাংশ মত। অন্যদিকে ২০১৯ সালে তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল ৪৪.৪৭% ভোট এবং বিজেপির শিবিরে এসেছিল ৩৮.৩২% ভোট। আবার ২০২১ ফলের দিকে তাকালে তাও শাসক দলের পক্ষে বেশ সন্তোষজনক। কারণ বিধানসভা ভোটের আগে সুনীল মন্ডলের বিজেপিতে যোগদানের কথা ঘোষণা করলেও ৭টি বিধানসভাতেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল। এখন লোকসভা ভোটেও সেই ধারা বজায় থাকে নাকি নিজের গানের যাদুতে মোহিত করে পদ্ম ফোটাবেন কবিয়াল তা সময় বলবে।