Loksabha Election 2024: কয়লাখনির লড়াইয়ে বাজিমাত কি করতে পারবেন ‘বিহারীবাবু’ নাকি ফের ফুটবে পদ্ম, নজরে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র
রাঢ়বঙ্গের কয়লাখনি অঞ্চলের আসন আসানসোল, রাজ্যে ক্ষমতায় আসলেও এই আসনে তৃণমূলের ঘাসফুল ফোটাতে বেশ বেগ পেতে হয় শাসক দলকে। ১৯৮৯ থেকে আসানসোল লোকসভার দখল বামেরা। ২০১৪ অবধি টানা ক্ষমতায় ছিল তাঁরাই। তবে পাষা উল্টোয় ২০১৪ সালে। এই আসনে বিজেপি প্রার্থী করে গায়ক বাবুল সুপ্রিয়োকে। সেই বছর প্রবল মমতা ঝড়েও প্রথম পদ্ম ফোটে আসানসোলে। তারপর ২০১৯ আবারও বিদায়ী সাংসদ বাবুলকেই প্রার্থী করে বিজেপি। তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে হারিয়ে সেই আসনে জয়ী হয় বাবুল। কিন্তু বাঁধ সাজে অন্য জায়গায়। ২০২২ সালে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরে প্রথমে বিজেপি এবং তারপর সাংসদ পদ ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বাবুল।
শূন্য আসনে উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী করে আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তথা পোশাক শিল্পী অগ্নিমিত্রা পালকে। উলটো দিকে বাবুলের ছেড়ে আসা আসনে তৃণমূল প্রার্থী করে ‘বিহারিবাবু’ নামে পরিচিত প্রখ্যাত বলি নায়ক শত্রুঘ্ন সিনহাকে। ব্যস আর তাতেই কেল্লাফতে! আসানসোলে ঘাসফুল ফুটিয়ে দিল্লি যান শত্রুঘ্ন। এমনকি তাঁর ভোটের ব্যবধান বেড়ে প্রায় ৩ লাখের বেশি ভোটে জয় পান তিনি। এই বারেও এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ ‘বিহারীবাবু’।
বিপরীতে এই আসনে প্রার্থী দিতে গিয়ে বার বার বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রের শাসকদলকে। প্রার্থীর নাম ঘোষণর আগে সূত্র মারফত খবর ছিল আবার অগ্নিমিত্রাকেই প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। কিন্তু ভোটের মুখে শিখ পুলিশের পাগড়ি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সেই দৌড় থেকে বেরিয়ে যান তিনি। তারপর এই আসনে শত্রুঘ্নের ‘স্টারডমের’ মোকাবিলা করতে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা করেন ভোজপুরী নায়ক পবন সিংহের নাম। কিন্তু নাম ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি প্রার্থী হবেন না বলে প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন পবন। তারপরেই এই আসনে বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সাংসদ এসএস আহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করে বিজেপি। এই আসনে লোকসভা ভোটে জোট সমর্থিত বাম প্রার্থী জাহানারা খান।
এবার বরং একটু চোখ দেওয়া যাক ভোটের অঙ্কের দিকে। ২০১৯ লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে বাবুল সুপ্রিয়োর জয়ের ব্যবধান ছিল ২ লাখের বেশি ভোটে। সেই ভোটে বিজেপির ঝুলিতে ছিল ৫১.১৬ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৫.১৯% ভোট। বাম-কংগ্রেস সম্মলিত প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ছিল ৮.৭৮%।
আবার উপনির্বাচনে বাবুলের জয়ের মাত্রা টপকে তিন লাখের বেশি ভোটে জয়ী হয় তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। সেই ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৫৭.২৫% ভোট, আর বিজেপি পেয়েছিল ৩০.৮০% ভোট। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেসের ভোট যোগ করলে তা সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯.১৯%।
আবার ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যায় আসানসোলের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূলের দখলে রয়েছে পাঁচটি এবং বিজেপির দখলে রয়েছে ২টি কেন্দ্র আসানসোল দক্ষিণ এবং কুলটি। তাই এই কেন্দ্রে গত দুই নির্বাচনের দিকে তাকালে শাসক দল তৃণমূল যে এগিয়ে তা বলাই বাহুল্য। আবার ভুলে গেলে চলবে না বিজেপির প্রার্থী এসএস আহলুওয়ালিয়াও এর আগে দুই নতুন কেন্দ্র দার্জিলিং এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে জয় পেয়েছিলেন। তা ছাড়া লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের ফলাফল যে এক হবে তার কোনও মানে নেই। তাই এখন দ্বিতীয়বারের জন্য ‘বিহারীবাবু’ অন্য সবাইকে ‘খামোশ’(শত্রুঘ্ন সিনহার সিনেমার বিখ্যাত ডায়ল্গ)করিয়ে জয় ছিনিয়ে আনেন নাকি তৃতীয়বারের জন্য বাংলা থেকে সংসদে যাবেন বিজেপি প্রার্থী সেটাই দেখার।