আবহাওয়া খারাপ, তাই ওড়েনি হেলিকপ্টার। তাতে কি, ‘কুছ পরোয়া নেহি’! ভার্চুয়াল মিডিয়ামেই সভা করলেন অভিষেক। কেবল সভা করলেন না, বেশ ঝাঁঝালো ভাষাতেই আক্রমণ বিজেপিকে। লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে রবীন্দ্রনাথ নিশানা সব কিছু নিয়েই।
বৃহস্পতিবার বীরভূমের রামপুরহাটে সভা ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিদায়ী সাংসদ শতাব্দী রায়ের সঙ্গে লড়াই বিজেপি প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্যের। আবহাওয়া খারাপ থাকায় হেলিকপ্টার উড়তে পারেনি। সেই কারণে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা করেন অভিষেক।
এই দিন প্রথমেই কেন্দ্রের টাকা আটকে রাখার প্রসঙ্গে টেনে আক্রমণ শানিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘মানুষের টাকা গায়ের জোয়ারে আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।’
মহিলা ভোট ধরে রাখতে অডিও ক্লিপ শুনিয়ে অভিষেকের দাওয়াই ‘কোচবিহারের জেলা কমিটির নেত্রী রাজ্য নেতৃত্বকে পাশে বসিয়ে বলেছেন, ক্ষমতায় এলে তিন মাসে বন্ধ হবে লক্ষ্মীর ভান্ডার। যাঁরা বন্ধ করতে চাইছেন, তাঁদের এই নির্বাচনে জমি ছাড়া কি উচিত!’
সন্দেশখালি নিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণে অভিষেক, ‘সন্দেশখালির যে বেলুন, তাতে আলপিন ফুটেছে। যাঁরা গলা ফাটাতেন, মিথ্যে খবর তৈরি করে বাংলাকে নির্লজ্জ ভাবে কলঙ্কিত করার চেষ্টা, চক্রান্ত এখন জনসমক্ষে।বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল বলছেন, এখানে ধর্ষণ করা হয়নি।ইচ্ছা করে ২০০০ টাকা দিয়ে মহিলাদের সম্ভ্রম নষ্ট করা হয়েছে।’
অভিযোগের তীর বসিরহাটে বিজেপির যে প্রার্থীর দিকেও, তৃণমূল সেনাপতি বলেন, ‘রেখা পাত্রের একটা ভিডিয়ো জনসমক্ষে এসেছে। সেখানে বলছেন, যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের না নিয়ে যাঁদের নিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে এর যোগাযোগ নেই। বিজেপির যে প্রার্থী, যাঁর সঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন, গঙ্গাধর কয়াল জানিয়েছেন, সেই রেখা ২০০০ টাকা নিয়ে মিথ্যে মামলা করেছেন। বিজেপি যাঁদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে গিয়েছে, তাঁদের সাজিয়ে নিয়ে গিয়েছে।‘
কেবল রাজ্য নয় দেশেও মহিলাদের সম্ভ্রম নিয়ে খোঁচা বিজেপিকে, বক্তৃতায় এসেছে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদ, সাক্ষী সিংহের প্রতিবাদের কথাও বলেন তিনি। শ্লীলতাহানির অভিযোগে যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সেই বিজেপি নেতা ব্রিজভূষণ সিংহের ছেলেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তাই নিয়েও কটাক্ষ বিজেপিকে।
এসএসসি মামলাতেও সুপ্রিম কোর্টের অন্তবর্তিকালীন স্থগিতাদেশ নিয়ে খোঁচা অভিষেকের। তিনি বলেন, ‘বিজেপি বলেছিল এসএসসি নিয়ে বোম ফেলব। মানুষের চাকরি খাওয়ার যে ষড়যন্ত্র, সেই বেলুনে আলপিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাই কোর্ট যে অর্ডার দিয়েছিলেন, ২৫ হাজার জনের চাকরি বাতিল, তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।‘
মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গেও কেন্দ্রীয় সরকারকে খোঁচা দিয়ে ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী বলেন, ‘ভোট হলে আবার বৃদ্ধি পাবে রান্নার গ্যাসের দাম। গরিব মানুষ খাবেন কি? জলের টাকা, রাস্তার টাকা, ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ।‘
অভিষেক বলেন, ‘তিন মাস ধরে মমতাকে অপমান করতে গিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করেছে। রবীন্দ্রনাথের কর্মভূমি বীরভূম জেলায়, শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর ফলক থেকে তাঁর নাম মুছেছে জনবিরোধী মোদী সরকার। বদলে নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এরা রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করেছেন।’
অভিষেক জানান, গত চার বছরে আবাসে ১০ পয়সাও দেয়নি বিজেপি। তাঁর কথায়, ‘কথায় কথায় মামলা করে এরা। আমার বিরুদ্ধে করুক। রামপুর হাটেই এক মঞ্চে আসুক। গত ১০ বছরে তোমার সরকার কী করেছে আর আমরা কী করেছি, পরিসংখ্যান দেব। পরিসংখ্যানের লড়াই হোক। শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।’
বীরভূমে কাজের ক্ষতিয়ান দিয়ে অভিষেকের দাওয়াই, ‘৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৬০ জন শ্রমিককে ১০০ দিনের বকেয়া কাজের টাকা দিয়েছে আমাদের সরকার। ৯ লক্ষ ১ হাজার ৯৩৭ জন মা, বোনকে প্রতি মাসে সরকার লক্ষ্মীর ভান্ডার দিচ্ছে। ১২ লক্ষ ৬১ হাজার ৩২১ জনকে প্রায় ৫৪৫ কোটি খরচ করে কন্যাশ্রীতে সহযোগিতা করেছে। ৩৬ লক্ষ ৭৮ জনকে আমাদের সরকার রেশন দিচ্ছে বিনামূল্যে।‘
বিজেপির উত্তরপ্রদেশ মডেল তুলেও অভিষেকের খোঁচা, ‘তফশিলিদের উপর সব থেকে বেশি অত্যাচার করেছে বিজেপি সরকার। এক বছরে ১৩ হাজার তফশিলির উপর আক্রমণ হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে তফশিলি ভাইয়ের উপর বিজেপি নেতা প্রস্রাব করছেন, ভিডিয়ো দেখেছেন। সেই যোগী আদিত্যনাথ সাত দিন আগে বীরভূমে এসে ভাষণ দিচ্ছেন। এখানে আসার আগে পড়াশোনা করবেন। যারা টিকি ধরে রাজনীতি করেন, সেই শাহের দফতর এনসিআরবির রিপোর্ট বলেছে দেশের সব থেকে সুরক্ষিত শহর কলকাতা।’