আবার পদচ্যুত কুণাল, চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন ‘মমতাদি এবং অভিষেক একদিন ঠিক বুঝবেন’

0 108

আবারও পদস্খলন। তৃণমূলের তারকা প্রচারকের তালিকা থেকেও বাদ পড়ল কুণাল ঘোষের নাম। সদ্য তাঁকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে রাজ্য সম্পাদকের ভূমিকা থেকে। সরানো হয়েছে তৃণমূল মুখপাত্রের পদ থেকেও। আগামী ২০ মে, লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার প্রচারের জন্য নির্বাচন কমিশনে তারকা প্রচারকের একটি তালিকা দিয়েছে শাসকদল। সেই তালিকা থেকেই বাদ পড়েছে কুণালের নাম। দলীয় বিষয়ে প্রকাশ্যে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করার জেরেই এই প্রতিক্রিয়া কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

চোখের জল মুছতে মুছতে কুণাল বললেন, ‘ভালোই হয়েছে, এই গরমে আর ঘুড়ে বেড়াতে হবে না।’ কুণাল ঘোষকে ঘিরে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাঁর অনুরাগী কর্মী সমর্থকদের। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কুণাল বলেন, ‘আপনারা যে ভাবে এসেছেন, আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সারা রাজ্য থেকে আমাকে সবাই শুভেচ্ছা সমর্থন জানিয়েছেন। আমি তৃণমূল কংগ্রেস সৈনিক। ১৯৯৩ সালে যখন সিপিএম মমতাদিকে খুনের চেষ্টা করেছিল, আমি অচৈতন্য অবস্থায় তুলে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্ত ঘরে বসে থাকা নেতাদের চামচা না হলেই পুলিশ দিয়ে হেরাস করার যে প্রথা আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। হোয়াটঅ্যাপ চ্যাটের সুপারিশে দল চলবে না। দলের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ কর্মীদের আবেগকেও মূল্য দিতে হবে। আমি পদ নয় পথে আছি। আমার বিশ্বাস আজ না হলে কাল মমতাদি এবং অভিষেক এটা অনুধাবন করতে পারবেন।’

বুধবারই কুণালকে রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, তাঁকে দলীয় পদ থেকে অপসারণে সায় ছিল শীর্ষ নেতৃত্বের। কুণালের শাস্তির বিষয়ে নাকি অনুমোদন রয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোর। সায় রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। কুণাল সংক্রান্ত প্রেস বিবৃতিটি দলের সাংসদদের পাঠানো হয়েছে অভিষেকের তরফে বলেই খবর। সেই বিবৃতিতে সই রয়েছে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের।

প্রসঙ্গত, বুধবার শাস্তি ঘোষণার পরেও কুণাল দলের একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দাগা জারি রেখেছেন। নাম না করেও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে দলের নেতা-মন্ত্রীদের বিঁধেছেন। ভোটের আবহে কুণালের এই সব কাজকর্ম দলের কাছে যথেষ্ট বিড়ম্বনারও। তাই হয়তো কুণালকে তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে সরানো সিদ্ধান্ত বলে দাবি রাজনীতির কারবারিদের। বৃহস্পতিবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘পারফর্ম্যান্সের’ প্রশংসা করেছেন কুণাল। তাঁর বক্তব্য, বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু যা করছেন, তা প্রশংসার যোগ্য এবং শিক্ষণীয়।
খোঁচা দিয়েছেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তাঁর কথায়, ‘শুভেন্দু যদি গোটা রাজ্য জুড়ে প্রচাক করতে পারেন, তা হলে লোকসভার দলনেতা হয়ে সুদীপ কেন শুধু তাঁর নিজের কেন্দ্র পড়ে থাকবেন? কেন অন্যান্য কেন্দ্রে প্রচারে যাবেন না?’

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই খবর মিলল, কুণালকে তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পঞ্চম দফায় রাজ্যের শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুর, হুগলি, বনগাঁ, হাওড়া উলুবেরিয়া, আরামবাগ কেন্দ্রে ভোট। সেখানে ভোটপ্রচারে কুণালকে দেখা যাবে না।

প্রসঙ্গত, ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। একটি রক্তদান শিবিরে গিয়ে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের ‘জনপ্রতিনিধি’ হিসেবে ঢালাও প্রশংসা করেন কুণাল। তাপসের সঙ্গে একই মঞ্চেও ছিলেন তিনি। তাই নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের রোষের মুখে পড়েছেন কুণাল। যদিও কুণালের বক্তব্য, ওই রক্তদান শিবিরে তিনি গিয়েছিলেন একেবারেই ঘটনাচক্রে। সেই শিবিরে তৃণমূলের স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মীও উপস্থিত ছিলেন। কুণালের মতে, তিনি সেখানে স্পষ্টই বলেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই তৃণমূলের ঘোষিত প্রার্থী। তিনি সুদীপের হয়েই ভোটে কাজ করবেন।

দলীয় বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘কুণালকে আগেই মুখপাত্রের পদ থেকে সরানো হয়েছিল, এ বার তাঁকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও সরানো হল। কুণালের বক্তব্যকে ‘দলের বক্তব্য’ হিসেবে যেন ধরা না হয়।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.