প্রথম দফা শেষে দুয়ারে কড়া নাড়ছে দ্বিতীয় দফার ভোট। ২৬ তারিখ শুক্রবার লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা। দেশের ১৩ রাজ্যের ৮৯ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ। যার মধ্যে রয়েছে উত্তর বঙ্গের তিন লোকসভা আসন। দ্বিতীয় দফায় বাংলার দার্জিলিং, রায়গঞ্জ এবং বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। ২০১৯ সালে এই তিন কেন্দ্রেই জয়ের মুখ দেখেছিল বিজেপি। তবে এই নির্বাচনে প্রথম থেকেই উত্তরবঙ্গকে পাখির চোখ করেছে শাসক দল তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার ছুটেছেন উত্তরবঙ্গে। পিছিয়ে নেই বিজেপিও। নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ একাধিক সভা করেছেন উত্তরে। বাংলার বুকে ৩০ আসন পাওয়ার লক্ষ্য মাত্রা বেঁধে দিয়েছেন অমিত শাহ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক দার্জিলিং-রায়গ্নজ-বালুরঘাট লোকসভা আসনের রাজনৈতিক সমীকরণ।
নজরে দার্জিলিং লোকসভা-(Election in Darjeeling Loksabha)
এখনও অবধি এই আসনে জোড়া ফুল ফোটাতে ব্যর্থ শাসকদল তৃণমূল। গত তিনবার এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ২০১৯ লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিল রাজু বিস্তা। তবে প্রার্থী যেই হোক না কেন, স্বপ্নের দার্জিলিয়ে ফুল ফোটাতে যে পাহাড়ি দলের সমর্থন একান্ত প্রয়োজন তা বিলক্ষণ জানে রাজনৈতিক দলগুলি। এই আসনে শেষবার পদ্ম ফোটাতে বিজেপির সঙ্গী হয়েছিল গোর্খা ন্যাশানাল লিবারেশন ফ্রন্ট। এই বারেও তারা সমর্থন দিচ্ছে বিজেপিকে। পদ্ম ফুলের প্রার্থী এই আসনের বিদায়ী সাংসদ রাজু বিস্তা। জিএনএলএফের সঙ্গে সঙ্গে এবারে বিজেপির বাড়তি অ্যাডভান্টেজ পাহাড়ের সর্বোচ্চ নেতা বলে কথিত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুঙের সমর্থন। রাজু বিস্তার বিপরীতে রয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী গোপাল লামা। তাঁকে সমর্থন করছে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। এ ছাড়াও এই আসনে জোট প্রার্থী হয়েছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মুনীশ তামাং। তবে বিজেপির জন্য একটি চিন্তাও রয়েছে। তা হল বিজেপির বিক্ষুব্ধ কার্শিংয়াঙের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। তাঁর দাবি ছিল এই ভোটে কোনও ভূমিপুত্রকে টিকিট দেওয়া হোক। তবে তা হয়নি। বিজেপির টিকিট পেয়েছেন গত বারের জয়ী সাংসদ আদতে মণিপুরের ছেলে রাজুকে। তাই নির্দল প্রার্থী হিসাবে লোকসভা ভোটে লড়ছেন বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মাও। এখন পদ্ম রাজ বজায় থাকে না প্রথম বারের জন্য পাহাড়ে জোড়া ফুল ফুটবে তা বলবে সময়।
রায়গঞ্জ
এই আসনে গত লোকসভা কেন্দ্রে পদ্ম ফুটিয়েছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। কেন্দ্রে মন্ত্রী সভাতেও ঠাই পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ বারে তাঁকে দল রায়গঞ্জে টিকিট দেয়নি। তিনি লড়ছেন কলকাতা দক্ষিণে তৃণমূলের মালা রায়ের বিরুদ্ধে। বরং তাঁর জায়গায় টিকিট পেয়েছেন কার্তিক পাল। একদা কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত আসনে ২০০৯ সালে শেষ কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন দীপা দাশমুন্সী। ২০১৪ সালে এই আসনে কান ঘেষে বেরিয়ে যান সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। সেইবার তৃতীয় এবং চতুর্থ ছিল বিজেপি এবং তৃণমূল।
কিন্তু ৫ বছরেই পাসা পালটায়। প্রধান দুই প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে বিজেপি এবং তৃণমূল। দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে লড়ে কানাইয়ালাল আগরওয়াল। অন্যদিকে সিপিএম এবং কংগ্রেসের হয়ে প্রাত্থী ছিলেন দীপা এবং সেলিম। কংগ্রেস এবং সিপিএমের ভোট কাটাকুটিতে জয়ী হন দেবশ্রী।
কিন্তু এই বারে বিজেপির প্রার্থী কার্তিক পাল একদা ছিল জোড়া ফুলে। কালিয়াগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন কার্তিক। এখন সেই হাতে তুলে নিয়েছে পদ্ম ফুল। অন্য দিকে তৃণমূলের প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীও এক সময় দেখা যেত পদ্ম শিবিরে। কিন্তু ফুল বদলে এখন সে তৃণমূলের প্রার্থী। এই আসনে এ বারে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ইমরান রম্জ। তবে তিনিও এক সময় পরিচিত ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা হিসাবে। এখন এই তিন দলবদলুর মধ্যে কাকে বেছে নেয় রায়গঞ্জ বাসী সেটাই দেখার।
বালুরঘাট
এই কেন্দ্রে গত লোকসভা ভোটে জিতে দিল্লি গিয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার। তখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দায়িত্বে দাপুটে নেতা দিলীপ ঘোষ। এখন সময় বদলেছে। ঘটনাচক্রে সুকান্তই এখন এই রাজ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি। এই বারেও রায়গঞ্জে বিজেপির হয়ে প্রার্থী তিনিই। তাঁর সমর্থনে প্রচার সভা করেছেন খোদ নরেন্দ্র মোদীও।
১৯৭৭ থেকে টানা ১০ বার বাম শরিক আরএসপির দখলে ছিল এই লোকসভা। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে ২০১৪-য় তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ জিতেছিলেন। তবে ২০১৯-এ তাঁকে হারিয়ে দেন বিজেপির সুকান্ত মজুমদার। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ইটাহার, কুশমন্ডি, কুমারগঞ্জ এবং হরিরামপুর আসনে তৃণমূল জিতেছিল। বিজেপি জিতেছিল বালুরঘাট, তপন এবং গঙ্গারামপুরে। এই কেন্দ্রে এই বার ত্রিণ্মূলের প্রার্থী বিপ্লব মিত্র। এই আসনে প্রার্থী দিয়েছে নওসাদ সিদ্দিকির দল আইএসএফও। তাঁদের প্রার্থী মোজাম্মেল হক। এখন দেখার এই বারেও এই আসনে পদ্ম ফোটে নাকি বালুরঘাটবাসীর মনে দাগ কাটতে পারে অন্য কোনও ফুল।