প্রথম, দ্বিতীয় পেরিয়ে তৃতীয়! সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে ‘পঞ্চায়েত ৩’। ওয়েব সিরিজের যারা ভক্ত তাঁদের কাছে এই নাম যথেষ্ট। গ্রাম্য জীবন, নিখাদ সারল্য এবং তুখোড় অভিনয়ের কাছে হার মেনেছে অনেকেই। করোনা সময়কালে লকডাউনের সময় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশ পেয়েছিল এই ওয়েব সিরিজের প্রথম সিজন। আর প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিল টিভিএফ(দ্য ভাইরাল ফিভার)-এর এই কাজ। সিরিজটির পরিচালনা করেছেন দীপককুমার মিশ্র। যিনি আবার পঞ্চায়েতে বিদ্যুৎ মিস্ত্রির ভূমিকায় অভিনয় করে সকলের নজর কেড়েছেন। ২০২০ সালের পরে দ্বিতীয় সিজন প্রকাশ পায় ২০২২ সালের। তারপর থেকেই অধীর আগ্রহে সকলে অপেক্ষা করছিলেন তৃতীয় সিজনের জন্য। ‘পঞ্চায়েত ৩’ মুক্তির পরেই সেই একই রকম ভালবাসা পেয়েছে মানুষের কাছে।
তারপর থেকেই মানুষের আরও আগ্রহ বেড়েছে ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজটির পর্দার পিছনের গল্প নিয়েও। যেমন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে শুট্যিংয়ের নানা গল্প। এই প্রতিবেদনে আপনাদের জন্য রইল ‘পঞ্চায়েতে’র সঙ্গে জড়িত তেমনই ৮ অজানা কাহিনী! যা শুনলে চমকে যাবেন আপনিও।
১। প্রথমেই বলি এই শোয়ের অন্যতম মুখ্য চরিত্র ‘বিকাশ’ বা ‘সচিব সহায়ক’-এর বিষয়ে। আপনি কি জানেন ‘বিকাশে’র চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতার আসল নাম চন্দন দাস। ‘সচিব সহায়কের’ চরিত্রে চন্দনের অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক। তাঁর সরল হাসি এবং ছোট ছোট চালাকি বেশ মন কেড়েছে। তিনি আবার এই সিরিজের চিত্রনাট্য লিখেছেন। কিন্তু তাঁকে প্রথমেই এই চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়নি, বরং তার জায়গায় অন্য একটি ছোট চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর ‘প্রধানজী’ অর্থাৎ রঘুবীর যাদবের কথায় ‘বিকাশ’ রোলের জন্য চন্দনের একটি অডিশন নেওয়া হয়। সেই অডিশন দেখেই মুগ্ধ হয়ে যান পরিচালক দীপক কুমার। তখন তাঁকে ঐ চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়। চন্দন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ মাস কমিনিউকেশনের ছাত্র।
২। এই ওয়েব সিরিজের ছোট্ট চরিত্র ‘ইলেক্ট্রিশিয়ানে’র ভূমিকায় অভিনয় করে নজর কেড়েছেন পরিচালক দীপককুমার নিজেই। অল্প সময়ে মেদহীন অভিনয় মনে ধরেছে দর্শকদের। কিন্তু কাস্টিং করার সময় অবশ্য দীপকের অভিনয় করার কথা ছিল না। তিনি পর্দার পিছনেই থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অডিশন দিতে আসা অভিনেতাদের মনে না ধরায়, নিজেই পোশাক বদলে নেমে পরেন ক্যামেরার সামনে। ব্যস তাতেই কেল্লাফতে।
৩। এই ওয়েব সিরিজটি যেখানে শ্যুট করা হয়েছে তার বেশিরভাগ আসল জায়গা। এমনকি পঞ্চায়েত অফিস, জলের ট্যাঙ্ক সবই আসল কিছুই সেটে তৈরি করা নয়। প্রধানের বাড়িটিও বাস্তবেই এক গ্রামের প্রধানের নিজস্ব বাড়ি। তাই বেশিরভাগ জায়গা সরকারি হওয়ায় শুটিংয়ের অনুমতি পত্র পেতেও বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল প্রোডাকশন টিমকে। এমনকি বেশ কয়েক মাস শুটিং শুরু করতে দেরী হয় সেই কারণে।
৪। ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজে উপপ্রধানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফয়সল মালিক। তিনি আবার প্রযোজকও বটে। ‘উপপ্রধান প্রহ্লাদের’ চরিত্রে অভিনয় করতে প্রথমে রাজি ছিলেন না ফয়সল। পরে পরিচালক দীপককুমার এবং লেখক চন্দন কুমারের অনুরোধে অভিনয় করেন। এর আগে প্রখ্যাত বলি পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ ছবিতে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফয়সল। শোনা যায় সেই অভিনয় দেখেই পরিচালক ফয়সলকে দিয়ে ‘প্রহ্লাদে’র চরিত্র অভিনয় করানোর সিদ্ধান্ত নেন।
৫। শুটিংয়ের জন্য আসল একটি পঞ্চায়েত অফিস খুঁজে বার করা সহজ কাজ ছিল না। শোনা যায় ৩০০ বেশি গ্রাম ঘুরে তবে পাওয়া যায় এই পঞ্চায়েত অফিসটির সন্ধান। তবে এখানেই শেষ নয়। গ্রামে রাস্তা ভাল না হওয়ার কারণে শুটিং লোকেশনে যেতেও বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় প্রোডাকশন টিম, অভিনেতা এবং বাকিদের। তাই এই গ্রামে শুটিংয়ের স্বার্থে অনেক রাস্তা তৈরি করা হয়েছে বলে খবর সূত্রে।
৬। গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শুটিং লোকেশন থেকে সেট সব কিছুই খুব সাধারণ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরিচালক। তাই সেই মতোই গল্পের সত্যতা বজায় রাখতে কাছের বাজার থেকেই কম দামে পোশাক কেনার সিদ্ধান্ত নেন পোশাক শিল্পী। কিন্তু এক বার ধোয়ার পরেই সেই কাপড় ছোট হয়ে যায়। ফলে পরে আবার ব্র্যান্ডেড পোশাকই কিনে আনতে হয়।
৭। ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজটির গল্প মূলত শীতকালীন সময়ের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু আসলে যখন শুটিং হয়েছিল তখন ছিল ভরা গরম। প্রায় ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গরমের মধ্যে সোয়েটার পরে শুটিং করার জ্বালা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।
৮। পঞ্চায়েত অফিস খোঁজার মতোই কঠিন ছিল এই সিরিজে দেখান বিখ্যাত ‘ভুতিয়া পেড়’ বা ভূতের গাছটি খোঁজা। শোনা যায় সিরিজের প্রায় অর্ধেক শুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পরে সেই গাছটির সন্ধান পাওয়া যায়। রোজ সকালে নাকি দল করে কয়েকজন নানা দিকে বেরিয়ে যাতেন গাছ খুঁজতে। গাছটি খুঁজে পাওয়ার দু’রাতের মধ্যেই শেষ হয় গাছটিকে কেন্দ্র করে শুটিংয়ের কাজও।